
ভূমি মালিকদের জন্য এসেছে এক যুগান্তকারী সুখবর। এখন থেকে মাত্র একটি কাগজ বা দলিল ব্যবহার করেই ছয় ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিসেবা পাওয়া যাবে, তাও কোনো মামলা ছাড়াই, ঘুষ বা দুর্নীতি ছাড়াই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে চালু হওয়া নতুন এই ব্যবস্থা ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এর বিধিমালার আওতায় কার্যকর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার জমি বা অধিকার ফিরে পেতে পারবেন।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নিচের ছয়টি বড় ভূমিসেবা পাওয়া যাবে—
অবিভক্ত বা উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনসংক্রান্ত বিরোধে সমাধান
যদি কোনো অবিভক্ত সম্পত্তিতে আপনার ন্যায্য অংশ বুঝিয়ে না দেওয়া হয়, তাহলে এখন আর মামলার প্রয়োজন নেই। আপনার সকল মালিকানা দলিলসহ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপনার জমি উদ্ধার ও মালিকানা প্রদান করা হবে।
জবরদখলকৃত জমি উদ্ধার
যদি কেউ রাজনৈতিক প্রভাব বা অন্য কোনো উপায়ে আপনার জমি জবরদখল করে রাখে, তাহলে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ধারা ৭ অনুযায়ী অভিযোগ করলে ডিসি মহোদয় তদন্ত সাপেক্ষে আপনার জমি ফেরত দেবেন।
অবৈধ দখলকারীকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে।
খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত জমি উদ্ধার
অনেক সময় রেকর্ড সংশোধনের সময় ব্যক্তিগত জমি সরকারি খাস খতিয়ানে চলে যায়। এখন থেকে আর আদালতে মামলা নয় জেলা প্রশাসক বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করলেই সেই জমি যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মালিকের নামে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
চলাচলের রাস্তা অবরোধমুক্ত করা
যদি আপনার ব্যক্তিগত বা শেয়ারকৃত রাস্তা কেউ অবৈধভাবে বন্ধ করে দেয়, তাহলে ডিসি বরাবর আবেদন করে সহজেই চলাচলের পথ পুনরুদ্ধার করা যাবে।
জমির শ্রেণি পরিবর্তনজনিত ক্ষতি প্রতিকার
যদি কোনো প্রতিবেশী মাটি বা বালু উত্তোলন করে আপনার জমির ক্ষতি করে বা জমির শ্রেণি পরিবর্তন ঘটায়, তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ করা যাবে। ডিসি মহোদয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন ও ভূমিধস প্রতিরোধ
সরকারি বা বেসরকারি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি বা বালু কাটলে, যার ফলে পার্শ্ববর্তী কৃষিজমি বা বসতি ঝুঁকির মুখে পড়ে, সেক্ষেত্রেও ডিসি বরাবর অভিযোগ দায়ের করা যাবে।
অভিযোগের ভিত্তিতে ভূমি ধস বা শ্রেণি পরিবর্তনের দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি রাস্তা ও হালুট জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
যদি কেউ সরকারি রাস্তা, হালুট বা রাস্তার পাশে জমি অবৈধভাবে দখল করে চাষাবাদ করে, রাস্তা কেটে নেয় বা ব্যবহার করে, তাহলে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
তিন মাসে সমাধান, মামলা নয় শুধু অভিযোগই যথেষ্ট
যদি কোনো ভূমি মালিকের রেকর্ড ভুল হয়, জমি দখল হয়ে যায় বা বণ্টনে বঞ্চিত হন, তাহলে এখন থেকে বিচারিক মামলা ছাড়াই জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করলেই তিন মাসের মধ্যে জমির দখল ফেরত দেওয়া হবে।
তবে এই ব্যবস্থা এখনো সকল জেলায় চালু হয়নি, ধাপে ধাপে সারাদেশে সম্প্রসারণের কাজ চলছে।