
কুমিল্লা বিভাগ গঠনের যৌক্তিকতা ও কুমিল্লার গৌরব
বিভাগের দাবি করার যুক্তিসমূহ
১️⃣ প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি
বড় কোনো বিভাগ যেমন চট্টগ্রাম ভাগ করলেই প্রশাসনের বোঝা কম হবে। স্থানীয় স্তরে প্রশাসনিক সেবা (জেলা, উপজেলা, উন্নয়ন প্রকল্প) দ্রুত ও দক্ষভাবে পরিচালনা করা যাবে।
২️⃣ দূরত্ব ও সেবা সুলভতা
অনেক এলাকায় প্রশাসনিক কেন্দ্র অনেক দূরে, যাওয়া আসা কষ্টসাধ্য। একটি নিকটস্থ বিভাগ হলে জনগণের জন্য সরকারি সেবা (আদালত, বিভাগীয় অফিস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা) নিকটবর্তী হবে।
৩️⃣ আঞ্চলিক উন্নয়ন সমতা
নতুন বিভাগ গঠনের ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনা কেন্দ্রীকরণ এড়ানো যায়; প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় স্বনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
৪️⃣ জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনা
আজকের দিনে কুমিল্লা ও সংশ্লিষ্ট ৬ জেলার আয়তন ও জনসংখ্যা একটি বিভাগ গঠনের উপযোগী বলে মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রস্তাবিত “কুমিল্লা বিভাগ” নামে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৫️⃣ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
এই অঞ্চলটি প্রাচীন “সামতট” নামক ভৌগোলিক-রাজনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। কুমিল্লা শহরেও অনেক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা একটি বিভাগের কেন্দ্র হিসাবে প্রাসঙ্গিকতা বাড়ায়।
৬️⃣ সরকারি পরিকল্পনা ও কমিশন সুপারিশ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নিকার (প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি) ইতিমধ্যেই কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে নতুন বিভাগ করার সুপারিশ দিয়েছে।
বিরোধ, প্রতিবন্ধকতা ও প্রশ্নবিদ্ধ দিকসমূহ
১️⃣ আঞ্চলিক স্বার্থ ও মতবিরোধ
নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার অনেক মানুষ এই অঞ্চলে কুমিল্লা নামকরণ ও অন্তর্ভুক্তির বিরোধ করছেন। তারা চান “নোয়াখালী বিভাগ” থাকুক বা ফেনী চট্টগ্রাম বিভাগেই থাকুক।
২️⃣ অবকাঠামো ও খরচ
নতুন বিভাগ গঠনের জন্য সদর দপ্তর, বিভাগীয় ভবন, কর্মী, লজিস্টিক্স ইত্যাদির পূর্ণব্যয় হবে। অর্থ ও সময় উভয়ই লাগবে, এবং সব ক্ষেত্রে এই খরচ মেটানো যেতে পারে কি না, সেটা বিবেচ্য।
৩️⃣ নামকরণ ও রাজনীতি
নামকরণ প্রশ্নও বিতর্কের। আগের সময়ে “ময়নামতি বিভাগ” নামটি প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু কিছু মানুষের আপত্তিতে তা বাতিল হয়। ২০২১ সালে “মেঘনা বিভাগ” প্রস্তাব হলেও স্থগিত করা হয়।
৪️⃣ সংবিধানিক ও আইনগত বাধা
প্রশাসনিক বিভাগ পুনর্গঠন করার জন্য আইনগত ও সাংবিধানিক বিধি রয়েছে, প্রয়োজনীয় আলোচনার প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত দিক
প্রাচীন সামতট রাজ্য, ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কুমিল্লাকে একাডেমিক ও ঐতিহাসিকভাবে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন
কুমিল্লা ইপিজেড বাংলাদেশের অন্যতম বড় শিল্পাঞ্চল। কৃষিতে স্বনির্ভরতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং বিদেশে কর্মরত প্রবাসী কুমিল্লাবাসীর রেমিট্যান্স এই জেলার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।
খাদ্য ও পোশাক
রসমালাই, কাচ্চি বিরিয়ানি, চানাচুর, মোরগ পোলাও ও বেগুন ভর্তা কুমিল্লার জনপ্রিয় খাবার।
পোশাকে খাদি, তাঁতের শাড়ি, জামদানি, পাঞ্জাবি ও স্থানীয় বুটিক পোশাক কুমিল্লার ঐতিহ্যের অংশ।
মানুষের চরিত্র ও সমাজব্যবস্থা
কুমিল্লার মানুষ পরিশ্রমী, শিক্ষিত, অতিথিপরায়ণ ও সমাজসচেতন। আইন, শিক্ষা ও প্রশাসনে তারা দক্ষ এবং মানবিক গুণে সমৃদ্ধ।
সংগীত, সাহিত্য ও শিল্প
কিশোর কুমার, উস্তাদ আলাউদ্দিন খান, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রফিকুন নবী, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরীসহ বহু শিল্পী কুমিল্লার গর্ব।
ক্রীড়া জগতে কুমিল্লা
ফুটবলে ঐতিহ্য, ক্রিকেটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সাফল্য, এবং তরুণদের অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, মার্শাল আর্টস অংশগ্রহণ কুমিল্লার ক্রীড়া শক্তির প্রমাণ।
জেন জি প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ কুমিল্লা
কুমিল্লার তরুণরা প্রযুক্তিনির্ভর, উদ্যোক্তা, সৃজনশীল ও সমাজসেবায় সক্রিয়। তারা ফ্রিল্যান্সিং, আইটি, সংস্কৃতি, ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে আধুনিক কুমিল্লা গড়ছে।
উপসংহার
ইতিহাসে গৌরবময়, সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ, শিক্ষায় অগ্রগামী, অর্থনীতিতে শক্তিশালী, আর মানুষের চরিত্রে সততা ও পরিশ্রম — এই কারণেই কুমিল্লা সেরা।
বশির আহম্মেদ
শিক্ষার্থী আইন বিভাগ সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সভাপতি সিসিএন-ইউএসটি ভলান্টিয়ার সার্ভিস ক্লাব।